কক্সবাজারে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি থেকে দুজন নারী প্রার্থী এবার সরাসরি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে কক্সবাজারে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন এই দুই নারী প্রার্থী।
তারা হলেন— কক্সবাজার-৪ (উখিয়া- টেকনাফ) সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী (বর্তমান সাংসদ) শাহীন আক্তার। অপরজন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) সংসদীয় আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হোসনে আরা।
২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) সংসদীয় আসন থেকে শাহীন আক্তার আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) সংসদীয় আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির সহধর্মিণী।
এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) সংসদীয় আসনে জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন হোসনে আরা। তিনি, কক্সবাজার -১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মৌলভী ইলিয়াসের স্ত্রী।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারে এখনো আশানুরূপ নারী জাগরণ সৃষ্টি হয়নি। শুধু তাই নয়, ভোটের অধিকার ও নির্বাচন সম্পর্কে কক্সবাজারের প্রায় ৭০ শতাংশ নারীর কোনো ধারণাই নেই। ঘরবন্দী অধিকাংশ নারী। যারা স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রকাশ করতে অক্ষম।
শিক্ষাবিদ সুকুমার দত্ত বলেন, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে নারী নেতৃত্ব আরও বেশি সৃষ্টি করা দরকার। নারীদের এগিয়ে দিতে হবে। ভয়, সংকোচ একজন নারীর পিছিয়ে পড়ার প্রধান শত্রু। বর্তমানে দেশে-বিদেশে নারীদের সবক্ষেত্রে এগিয়ে যাবার অবাধ সুযোগ রয়েছে। যারা বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাচ্ছে তারাই সফল।
কক্সবাজার সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ এবং জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কানিজ ফাতেমা আহমেদ বলেন, সাংবিধানিকভাবে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হলেও কক্সবাজার যেহেতু শিক্ষা দীক্ষায় অনগ্রসর, সেহেতু নারী গণজাগরণ এখনো তেমনভাবে সৃষ্টি হয়নি। সুতরাং নারীরা অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে ক্রমাগতভাবে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে নানা বাধা বিপত্তি, সামাজিক নিরাপত্তা, নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণে এখনো আমরা দূর করতে পারিনি। এর জন্যে আমাদের আরও দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে। এছাড়াও শিক্ষা দীক্ষায় আরও অগ্রসর হতে হবে। নারীর নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। তবে আমি আশাবাদী আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান উন্নয়ন ধারা অব্যাহত থাকলে সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারেও নারী জাগরণ সৃষ্টি হবে।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) সংসদীয় আসনে জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা হোসনে আরা বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকে চকরিয়া-পেকুয়ার প্রতিটি পাড়া মহল্লায় আমি বিচরণ করেছি। মানুষের মতামত চেয়েছি। তারা আমাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্তন জানিয়েছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আমি মানুষের আরও বেশি সাড়া পাচ্ছি। নির্বাচনে আমি জয়লাভ করব বলে শতভাগ আশাবাদী।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের সংসদ সদস্য প্রার্থী (বর্তমান সাংসদ) শাহীন আক্তার বলেন, উখিয়া-টেকনাফের মানুষ আমাকে খুবই ভালোবাসেন। আমি সকল ভোটারের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এগিয়ে যেতে হলে নারীকে ঘর থেকে বের হতে হবে। নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। আমি সবার সহযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছি। আমি আশাবাদী যে নির্বাচনে শতভাগ জয়ী হবো।
উল্লেখ্য, এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় হাসিনা আহমেদ দলীয় নির্দেশে নির্বাচন থেকে বিরত রয়েছেন। তিনি ২০০৮ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) সংসদীয় আসনে বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমেদকে পরাজিত করে হাসিনা আহমেদ কক্সবাজার জেলার প্রথম নারী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। হাসিনা আহমেদ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য কক্সবাজার জেলা থেকে প্রথম মন্ত্রীসভায় জায়গা করে নেওয়া সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দীন আহমেদ এর সহধর্মিনী।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় কক্সবাজার -১ সংসদীয় আসনে হাসিনা আহমেদ নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন। তবে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুণরায় বিএনপি নির্বাচনে আসলে অনুরুপভাবে কক্সবাজার-১ আসন থেকে দ্বিতীয় বারের মতো ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন হাসিনা আহমেদ। সেই সময় তিনি সফল হতে পারেননি। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাফর আলমের কাছে পরাজিত হন হাসিনা আহমেদ।
সুত্র: ঢাকামেইল
পাঠকের মতামত